দরুদ শরীফ পড়ার ফযীলত ঃ (১) হযরত আবু হুরাইয়া (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (সাঃ) ইরশাদ করেছেন: কোন ব্যক্তি যদি মাত্র একবার দরুদ শরীফ পাঠ করে, তবে একজন ভ্রাম্যমান ফেরেশতা আমার দরবারে উপনীত হয়ে খবর দেয়: ইয়া রাসুলুল্লাহ! অমুকের পুত্র অমুক আপনার উপর এত মোর্তবা দরুদ শরীফ পাঠ করেছেন, তখন আমিও তার উপর ঠিক তত মোর্তবা দরুদ পাঠ করি। অতঃপর সেই ফেরেশতা আল্লাহর দরবারে আরযী পেশ করে- হে-মা’বুদ। অমুকের পত্র অমুক ব্যক্তি আপনার হাবীবের উপর এত মোর্তবা দরুদ পাঠ করেছে। তৎক্ষণাৎ আল্লাহ তাকে বলেন- উত্তম। কিরামান ও কাতেবীনকে বলে দাও, এ ব্যক্তির প্রত্যেক মোর্তবা দরুদ পাঠের পরিবর্তে যেন তার আমলনামা থেকে একটি করে গুনাহ কেটে দেয় এবং আমার পক্ষ থেকে প্রত্যেক কাটাস্থানে দশটি করে নেকী লিখে দেয়। (মুয়াত্তা শরীফ)।
(২) আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জুম্আর নামাযের জন্য মসজিদে উপস্থিত হয়ে আযানের পর ও খুতবা আরম্ভ হওয়ার আগে চল্লিশ মোর্তবা নিম্মোক্ত দরুদ শরীফ পাঠ করবে তার চল্লিশ বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। (বুখারী শরীফ)। দরুদ শরীফটি হলো - আল্লা হুম্মা ছলি’øআলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উ¤িঁ§য়ে ওয়া ‘আলা-আ-লিহি ওয়া আছহা-বিহী ওয়া বা-রিকা ওয়া সাল্লিম।
(৩) যদি কেউ উক্ত দরুদ শরীফ আছরের নামায বাদ একশ বার পড়ে তবে তাঁর আশি বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। যদি প্রত্যেক জুমআর দিন নামাযের পূর্বে কেউ উক্ত দরুদ শরীফ এক হাজার বার পড়ে, তবে যতদিন না ঐ ব্যক্তি স্বপ্নে তাঁর বেহেশতের বাড়িটি দেখতে না পায় ততদিন তার মৃত্যু হয় না। (মুসলিম শরীফ ও আত্তারগীব ফি ফাযায়িলিল আমাল লি ইবনে শাহিন, ১৪ পৃষ্ঠা হাদিস নং-১৯)।
(৪) নূরে মুজাসসাম রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি আমার উপর জুম্আর রাত ও জুম্আর দিনে একশ বার দরুদ শরীফ পাঠ করে আল্লাহর তা’আলা তার একশটি হাজত পূরণ করবেন। ৭০টি আখিরাতের আর ৩০টি দুনিয়ার। (শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ১১১ পৃষ্ঠা, হাদিস নং-৩০৩৫)।
(৫) রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন: কিয়ামতের দিন আমার নিকটতম ব্যক্তি হবে যে, দুনিয়ায় আমার উপর বেশি পরিমাণে দরুদ শরীফ পড়েছে। (তিরমিযী, ২য় খন্ড ২৭ পৃষ্ঠা, হাদিস নং-৪৮৪)।
(৬) রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি আমার উপর সকালে দশবার ও সন্ধ্যায় দশ বার দরুদ শরীফ পাঠ করে তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ নসীব হবে। (মাজমাউয যাওয়ায়িদ,১০ম খন্ড, ১৬২ পৃষ্ঠা, হাদিস নং-১৭০২২)
(৭) হুজুরপূর নূর (সাঃ) ইরশাদ করেন: যে এটা বলে, “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মদ ওয়া আনযিলহুল মাকয়াদাল মুকাররাবা ইনদাকা ইয়াওমাল কিয়ামাতি তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়ে যাবে”। (মুজাম কবীর, ৫ম খন্ড,২৫ পৃষ্ঠা, হাদিস নং-৪৪৮০)।
(৮) রহমতে আলম রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি কিতাবে আমার উপর দরুদ পাক লিখেছে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমার নাম তাতে থাকবে, ফিরিশতারা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে। ( মুজাম আওসাত, ১ম খন্ড ৪৯৭ পৃষ্ঠা, হাদিস নং-১৮৩৫)
(৯) রাহমাতুল্লীল আলামীন নবিজী (সাঃ) ইরশাদ করেন: “ হে লোকেরা নিশ্চয় কিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা এবং হিসাব নিকাশ থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি পাবে সেই ব্যক্তি, যে তোমাদের মধ্যে আমার উপর দুনিয়াতে অধিক হারে দরুদ শরীফ পাঠ করে থাকে।” (আল ফিরদৌস বিমাসুবিল খাত্তাব, ৫ম খন্ড,২৭৭ পৃষ্ঠা হাদিস-৮১৭৭) ।
(১০) আল্লাহ পাকের প্রিয় মাহাবুব, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ইরশাদ করেন: নামাযের পর হামদ, সানা ও দরুদ শরীফ পাঠকারীকে বলা হয়: দোয়া কর কবুল করা হবে। প্রার্থনা কর, প্রদান করা হবে। (নাসায়ী,২২০ পৃষ্ঠা, হাদিস নং-১২৮১)
(১১) নবী করীম (সাঃ) ইরশাদ করেন: “যে আমার উপর এক বার দরুদে পাক পাঠ করে, আল্লাহ তা’ আলা তার জন্য এক ‘ক্বীরাত’ পরিমান সাওয়াব লিখে দেন। ক্বীরাত হচ্ছে উহুদ পর্বতের সম-পরিমাণ।(মুসান্নিফ আব্দুর রাজ্জাক, ১ম খন্ড,৩৯পৃষ্ঠা, হাদিস নং-১৫৩)।
(১২) সুলতানে দো- আলম জনাবে রাসূল পাক (সা:) ইরশাদ করেন: কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলার আরশের ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না। তিন ব্যক্তি ( ঐ দিন) আল্লাহ তা’ আলার আরশের ছায়ায় থাকবে। আরজ করা হলো: ইয়া রাসূল্লাহ (সা:) তারা করা হবে? তিনি ইরশাদ করলেন: (ক) ঐ ব্যক্তি যে আমাঁর উম্মতের পেরেশানী দূর করে। (খ) আমার সুন্নাতকে জীবিতকারী। (গ) আমাঁর উপর অধিক পরিমাণে দরুদ শরীফ পাঠ কারী।” (আল বাদূরুস সাফিরাতু লিসসূয়ুতী, ১৩১ পৃষ্ঠা, হাদিস-৩৬৩)।
(১৩) রাসূল (সা:) ইরশাদ করেন “যে ব্যক্তি এটা বলে “জাযাল্লাহু মুহাম্মাদান মা হুয়া আহলুহু” সত্তর জন ফিরিশতা এক হাজার দিন পর্যন্ত তার জন্য নেকী লিখতে থাকে”। (মুজাম আওসাত,১ম খন্ড ৮২ পৃষ্ঠা, হাদিস নং-২৩৫) ।
(১৪) হযরত ওমর ফারুক (রা:) বলেন: “দোয়া আসমান ও যমীনের মধ্যখানে ঝুলন্ত থাকে। তা থেকে কিছুই ওপরে যায় না(অর্থাৎ দোয়া কবুল হয় না) যতক্ষণ পর্যন্ত না তুমি আঁপন নবীর উপর দরুদ পাঠ করো”। (জামে তিরমিযী,২য় খন্ড, ২৮ পৃষ্ঠা হাদিস নং-৪৮৬)।
(১৫) রাসূল (সা:) ইরশাদ করেন: ‘যখন কোনো জাতি কোনো বৈঠকে বসে আর সেখানে যদি তারা আল্লাহকে স্বরণ না করে ও নবী করীম (সাঃ) এর প্রতি দরুদ পাঠ না করে তাহলে তাদের জন্য কিয়ামতের দিন সে আফ-সোসের কারণ হবে, যদিও তারা পুরষ্কার হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করে”। হাকেম১/৫৫০, মুসনাদে আহমদ হাদিস-৯৯৬৬)। তাইতো কবি বলেন “ কবর যদি চাও উজালা দরুদ বানাও গলের মালা/খুলবে তোমার দিলের তালা দেখবে নবী মোস্তফা”।
আল্লাহ পাক প্রত্যেক ভালো কাজের পূর্বে ও পরে আমাদের নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করার তাওফিক দান করুন, আমীন।